Monday, June 13, 2016

What to do if Snake bites?

সাপ চেনা জানা সাপের কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা হাসপাতালে সাপের কামড়ের চিকিৎসা বিষয়ে জনসাধারনের জ্ঞাতব্য কিছু বিষয়

শুরুর কথা
আমাদের দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে সরকারী মতে প্রায় প্রায় ৫০,০০০ মানুষ মারা যান, বেসরকারী মতে এই সংখ্যাটা প্রায় ,০০,০০০ অথচ অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের দেশের থেকে অনেক বেশি বিষধর সাপ থাকলেও মৃত্যু হার বছরে মাত্র - জনএই ফারাক কেন ?
তার কারণ এখনও আমাদের দেশে বহু মানুষ সাপের কামড়ালে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না গিয়ে হাজির হন ওঝা, গুনীন, পীর, ফকির বা মনসার থানে এর সাথে যোগ হয়েছে গ্রাম্য এলাকার মানুষের জন্য সঠিক চিকিৎসার অপ্রতুলতাএটা দুঃখের হলেও সত্যি যে, MBBS সিলেবাসে সাপের কামড়ের চিকিৎসা বিষয়টি ভীষণভাবে অবহেলিত তার কারণ হয়ত এটি একটিঅবহেলিত গ্রামীণ সমস্যা 
ভারতের ৬ টি রাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁদের নানা মুল্যবান বক্তব্য কেস হিস্ট্রিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে এই অবহেলিত বিষয়টির চিকিৎসা সর্প দংশনের চিকিৎসায় একটি জাতীয় স্তরের নীতিমালা তৈরি হওয়ার পথেপশ্চিমবঙ্গের অষ্টম শ্রেনীর পাঠক্রমে বিষয়টি এসেছে আরও একটু সচেতন হলে বহুলাংশে এই মৃত্যু এড়ানো সম্ভবআসুন কিছু অবশ্য জ্ঞাতব্য বিষয় আমরা জেনে রাখিবিষধর বিপজ্জনক  কোনগুলো ? চিনে রাখুন মহাচার কেপশ্চিমবঙ্গের মাত্র চারটি সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়
) গোখরো (ফণাধর নার্ভবিষ)
) কেউটে (ফণাধর নার্ভবিষ)
) চন্দ্রবোড়া (রক্ত কনিকা ধ্বংশকারী)
) কালাচ (ফণাহীন নার্ভ বিষ)
এছাড়া আছে মারাত্মক বিষধর শাঁখামুটি, কিন্তু তা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নেই কারণ শাঁখামুটি  এতোই শান্ত যে, ওর কামড়ে মৃত্যুর কোনো ইতিহাস নেইআমাদের এলাকার বাকি আর কোনও সাপ
থেকে মৃত্যুভয় নেই
কামড় এড়াতে
*বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন
* রাতে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙ্গিয়ে শোবেন (মেঝেতে ঘুমালে মশারি বাধ্যতামূলক)
* অন্ধকারে হাঁটাচলা করবেন না, একান্তই বাধ্য হলে হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তা ঠুকে চলুন, হাততালি দিয়ে লাভ নেই, কারণ সাপের কান নেই
* জুতো পরার আগে তা ঝেড়ে নিন
* মাটির বাড়িতে কোনও ইঁদুর গর্ত থাকলে তা আজই বুজিয়ে ফেলুন
জেনে রাখুন তাবিজ কবজ মাদুলি আংটি কোনও কাজের নয় একমাত্র সাবধানতাই সাপের কামড় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে
সাপের কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা
Do R_I_G_H_T
R- Reassurance
রোগীকে আশ্বস্ত করুন কারণ রোগী খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন আতঙ্কও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে রোগীকে বোঝান, সাপের কামড়ে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসায় বেঁচে উঠেছেন, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন
I – Immobilization
যত কম নড়াচড়া হবে তত কম হারে বিষ সারা শরীরে ছড়াবে স্কেল বা বাঁশের টুকরো সহ হাতে/ পায়ে (যে অংশে কামড়াবে) কাপড় দিয়ে হাল্কা করে বেঁধে দিন হাত বা পা (কামড়ের নিকটতম স্থান) যাতে তিনি ভাঁজ করতে না পারেন তাই এই ব্যবস্থা
GH – Go To Hospital
ফোন করে জেনে নিন আপনার নিকটতম যে হাসপাতালে
) A.V.S ,
) নিওস্টিগমিন
) অ্যাট্রোপিন এবং
) অ্যাড্রিনালিন আছে সেই হাসপাতালে চলুন মাথায় রাখবেন সাপের কামড়ের সম্পূর্ণ চিকিৎসা একটি
ব্লক প্রাইমারী হেলথ সেন্টারেই সম্ভবসম্ভব হলে রোগীকে মোটর সাইকেলের মাঝে বসিয়ে রোগীর সাথে কথা বলতে বলতে চলুন জেনে রাখবেন এখানে সময়ের ভূমিকা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
T- Tell Doctor for Treatment
হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা করতে বলুন কথা বলতে গিয়ে রোগীর কথার মধ্যে কোনও অসঙ্গতি (যেমন কথা জড়িয়ে আসা, নাকি সুরে কথা বলা খেয়াল করলে তা যথাযথ
(কতক্ষন আগে শুরু হল) ভাবে চিকিৎসকে জানান
RULE OF 100
সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে  ১০০ মিলিলিটার AVS শরীরে প্রবেশ করলে রোগীর বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০% হাসপাতালে নিয়ে গেলেনকোন পথে চলবে চিকিৎসা ? ডাক্তার কীভাবে বোঝেন সাপের কামড় ?
২০ WBCT (20 Minute Whole Blood Clotting Test)
এই পরীক্ষার দ্বারা রোগীর রক্ত তঞ্চনের কোনও ব্যাঘাত ঘটেছে কি না তা জানা যায়
উপকরন
) সিরিঞ্জ
) শুকনো নতুন পরিষ্কার কাঁচের টেস্ট টিউব (প্লাস্টিক হলেও হবে না পরিস্কার করে ধুয়ে নিলেও হবে  না পরীক্ষা সঠিক ভাবে হওয়ার জন্য নতুন এবং কাঁচের এই দুটি বিষয়ই কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ )
প্রণালি-
রোগীর শরীর থেকে মিলিলিটার রক্ত নিয়ে নতুন কাঁচের টেস্ট টিউবে দাঁড় করানো অবস্থায় ঠিক ২০ মিনিট রেখে (স্টপ ওয়াচ হিসেব সুবিধাজনক) টেস্টটিউবটিকে কাত করে দেখতে হবে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না রক্ত জমাট না বাঁধলে অবশ্যই চন্দ্রবোড়ার কামড় খেয়াল রাখুন এই পরীক্ষার জন্য কোনও ল্যাবরেটরি লাগে নাচন্দ্রবোড়া (হেমাটক্সিক) ছাড়া সমস্ত সাপের কামড় নিশ্চিত হওয়া যায়
কেবলমাত্র রোগীর লক্ষ্মণ দেখে, বিষক্রিয়ার লক্ষ্মণ-
) দু চোখের পাতা পড়ে আসা Bilateral Ptosis (সব সাপের কামড়ের মূল লক্ষণ)
) কামড়ের স্থানে অসম্ভব জ্বালা যন্ত্রণা (ফণাধর সাপের ক্ষেত্রে)
) ক্রমবর্ধমান ফোলা
) শরীরের নানা স্থান থেকে রক্ত বেরিয়ে আসবে (চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে)
) ঢোঁক গিলতে অসুবিধে
) ঝাপসা দেখা
) জিভ জড়িয়ে
) ঝিমিয়ে পড়া
চিকিৎসায় দেরি হলে শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু
*এশিয়ার বিষাক্ততম সাপ কালাজ এর কামড়ে কোনও জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না, দংশন স্থানে কোনও চিহ্ন পাওয়া প্রায় যায়ই না পেটে ব্যাথা, গাঁটে গাঁটে ব্যাথা, খিঁচুনি কিংবা শুধুমাত্র দুর্বলতা অনুভব করার লক্ষনের সাথে দুচোখের পাতা পড়ে আসা নিশ্চিত কালাজের কামড়ের লক্ষণ
চিকিৎসা
বিষক্রিয়া নিশ্চিত হলে ডাক্তার
*        কোন স্কীন টেস্ট ছাড়াই (যা ২০১০ সালে WHO- নির্দেশিকায় বাতিল হয়ে গেছে) শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই চার ভাগের এক ভাগ অ্যাড্রিনালিন ইনজেকশন চামড়ার তলায় দিয়ে (বাকি ADVERSE REACTION মোকাবিলায় কাজে লাগতে পারে বলে সিরিঞ্জে টানা থাকবে)
*          শিরা ফুঁড়ে স্যালাইনের সাথে ১০ ভায়াল AVS এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শরীরে প্রবেশ করাবেন সাথে অবশ্যই দেবেন নিওস্টিগমিন এবং অ্যাট্রোপিন (ফণাধর নার্ভবিষ গোখরো কেউটের ক্ষেত্রে এই দুই ইঞ্জেকশন না প্রয়োগ হলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য কেবলমাত্র চন্দ্রবোড়ার কামড় ১০০% নিশ্চিত থাকলে এই দুই ইঞ্জেকশনের ভূমিকা নেই)
*        কোনও অবস্থাতে রোগীকে রেফার করতে হলে ১০ ভায়াল AVS, নিওস্টিগমিন এবং অ্যাট্রোপিন না দিয়ে রেফার করা যাবে না (জেনে রাখুন গত আগস্ট ২০১৪ বিষ্ণুপুরের মালতী লোহারকে কেউটে সাপে কামড়ালে ১০ এর পরিবর্তে ৫ ভায়াল AVS দিয়ে নিওস্টিগমিন এবং অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন না দিয়ে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল থেকে বাঁকুড়ায় রেফার করায় তাঁর মৃত্যু ঘটে)
*        AVS দিলে ৭০% ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (শ্বাসকষ্ট, শরীরে আমবাতের মত দেখতে পাওয়া ইত্যাদি) ঘটে যাকে সাময়িক স্যালাইন বন্ধ করে ইনজেকশন সিরিঞ্জে ধরে রাখা . ml আড্রিনালিন দিয়ে সফলভাবে মোকাবিলা সম্ভব
*        বিষক্রিয়ার লক্ষ্মণ অনুযায়ী ২য় বা ৩য় -ভি-এস এর ডোজ বড় হাসপাতালে (কিডনির পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে এমন হাসপাতালে) দেওয়া উচিৎচন্দ্রবোড়ার কামড়ে চিকিৎসায় দেরী হলেই কেবল ডায়ালেসিস লাগে(চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মিনিট দেরীর অর্থ কিডনির % ক্ষতি ) ফণাধর সাপের কামড়ে চিকিৎসার দেরী হলে নেক্রোসিস হয়ে আঙুল (দংশন স্থান) কেটে বাদ দিতে হতে পারেতাই আসুন সকলে মিলে আটকাই সমস্ত মৃত্যুকে, সাপের কামড় এড়াবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই, সাপে কামড়ালে রোগীকে সত্বর সাপের কামড়ের চিকিৎসা হয় এমন নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে চলি এবং সাপের কামড় সহ সমস্ত সঠিক চিকিৎসা বিনামুল্যে মানুষ যাতে পায় তার দাবী জানাই
তবু সাপের কামড়ে কোনও রোগীর যদি মৃত্যু ঘটে জেনে রাখুনমৃত ব্যক্তির বাড়ীর লোক এক কালীন ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন কোন রোগীর মৃত্যু ঘটলে সরকারী হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারমৃত্যুর কারণ যে সাপের কামড়এই মর্মে শংসাপত্র প্রদান করবেন কারণ সাপে কামড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের প্রাপ্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নয় এই শংসাপত্রই গ্রহণীয় নথি

(সরকারী অর্ডার নং- ১৫৬১(১৯)F.R./P-/০৪ তারিখ ১৯..২০০৮)

No comments:

Post a Comment